ফ্রিল্যান্সিং এর প্রচারণা এবং ছাত্রদের ফ্রিল্যান্সিং

বাংলা ব্লগফ্রিল্যান্সিং২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ফ্রিল্যান্সিং এর প্রচারণা এবং ছাত্রদের ফ্রিল্যান্সিং

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং কে নিয়ে ওভার পাবলিসিটি হচ্ছে। এই প্রচারণা কেউ করছে নিজে পাবলিসিটি পাওয়ার জন্য আর কেও করছে নিজে কিছু কামিয়ে নেওয়ার জন্য। আর প্রতিদিনই অসংখ্য ছেলে-মেয়েরা সবকিছু ফেলে এই সেক্টরে ঢুকছে আর অসংখ্য ছেলে-মেয়েরা হতসায় নিমজ্জিত হচ্ছে।

এখানে আবেগের বশে এসে কোন লাভ নেই। আর আসলাম, বসলাম, টাকা গুনলাম এই ভ্রান্তিটাও বেশীরভাগ নতুনদেরই রয়েছে।

আমি বলছি না যে এই সেক্টর টা খারাপ বা নতুনদের আসা যাবে না। আমি এটাই বলতে চাচ্ছি যে, এই সেক্টর সবার জন্য না। সবাই সবকিছু পারে না।

আর যারা এই সেক্টরটাকে এতখানি ফোকাস করছেন, তাদেরকে বলছি কাউকে এই সেক্টরে নিয়ে আসার আগে তার এবিলিটি সম্পরকে নিশ্চিত হয়ে নিন। আগেই বলেছি সবাই সবকিছু পারে না। তাই একজনকে লাখ লাখ টাকার স্বপ্ন দেখিয়ে হতাশ করার চেয়ে আগেই বুঝিয়ে বলা ভালো না যে, এই সেক্টরে সবাই সফল হতে পারে না।

আমার কাছে এই পর্যন্ত প্রায় ১০-১২ বারো জন এসেছে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে বা কাজ শিখতে। তারা এসেছে আমার ইঙ্কামের অঙ্ক শুনে। যেহেতু ঘরে বসে কাজ করি এবং আমার কোন বড় ডিগ্রি নেই, তাই মনে করেছে এটা খুব সহজ কাজ। আমি তাদের সবাইকে ভালো করে বুঝিয়েছি যে, তাদের দিয়ে এসব হবে না। কারন আমি তাদের এবিলিটি চেক করে দেখেছি। এখন বলতে পারেন, কাজ শেখানোর আগেই এবিলিটি জানলেন কিভাবে? ভাই, এতোবছর ধরে এই সেক্টরে আছি আর এটা বুঝবো না?

অনেকে আবার নাছোড়বান্দা হয় কাজ শেখার জন্য। তাদেরকে যতই বুঝানো হয় যে সে এটা পারবে না, সে ততোই আঠার মতো লেগে থাকে। মাঝে মাঝে এমন ছেলে-মেয়েরা অনেক শাইন করতে পারে, কারন কোন কিছুতে আঠার মতো লেগে থাকতে পারাটাও একটা ভালো গুন এই সেক্টরে। কিন্তু বেশীরভাগই সঠিক বিষয়ের উপর আঠা লাগাতে পারে না।

একটা উদাহরন দেইঃ

আমি এরকম একজন বেসিক এইচটিএমএল/সিএসএস শেখানোর পর আর সময়ে কুলিয়ে উঠতে না পেড়ে বললাম ভাই আর সময় হচ্ছে না। তাও আমার পিছনে আঠার মতো লেগে আছেই এখনো তাকে শেখানোর জন্য। কিন্তু সে যদি এই সময়টা প্র্যাকটিসের পিছনে ব্যয় করতো তাহলে এতদিনে টাকাও গুনতে পারতো। আমরা যেখানে কোন হাতে-কলমে গাইড ছাড়া এতদূর এসেছি সেখানে সে বেসিক শেখার পরও প্র্যাকটিস করতে পারছে না বা করার ইচ্ছে করছে না। তাহলে বলুন তাদেরকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে কি লাভ।

যাদের প্রবল আগ্রহ এবং ইচ্ছে আছে তারাই এই সেক্টরে উন্নতি করতে পারবে, এটাই চিরন্তন সত্য। আবেগের বশে বা টাকার অঙ্ক শুনে এই সেক্টরে না আসাটাই ভালো। কারো ইঙ্কাম রিপোর্ট শুনে উৎসাহিত হওয়ার আগে দয়া করে তার সাফল্যের আগের ঘটনাগুলি শুনুন। তার কাছে শুনুন যে, সে এই টাকাগুলি বসে থেকে পেয়েছে, নাকি এটা তার প্রচন্ড প্ররিশ্রমের ফল।

ছাত্রদের ফ্রিল্যান্সিংঃ

আমি সবসময়েই যা বলি, যেসব ছাত্র ভাইদের পরিবারের সামর্থ্য আছে তোমাদের লেখাপড়া ও সকল খরচ যোগানোর, তোমরা প্লিজ এসব বাদ দিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তোমরাই একদিন এই দেশকে লিড করে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আর যাদের পড়াশোনা ভালো লাগে না, তাদের কথা আলাদা। আগেই দুইবার বলেছি, সবাইকে দিয়ে সবকিছু হয় না।

ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে লাখ টাকা কামাবেন, তাহলে আর পড়াশোনা করে লাভ কি, তাই না? ভাই এই লাখ টাকা টা তোমার কাছে এখন অনেক বড় লাগলেও, আসলে কিন্তু খুব বড় অঙ্ক না এটা। এর থেকেও অনেক ভালো অঙ্কের বেতন পাবে তুমি ভালো করে পড়াশোনা করলে।

এখন আমাকে প্রশ্ন করতে পারো যে আপনি কেন ফ্রিল্যান্সিং করেন?

এটা সত্যি কথা এবং যা আমি অকপটে স্বীকার করবো যে, আমি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছি টাকার জন্য। আমার ফ্যামিলির এমন সামর্থ্য ছিল না যে আমাকে আরও ৫ বছর পড়াশোনার খরচ দিয়ে যাবে। হয়তো দিতে পারতো, কিন্তু তারপর? আমি পড়াশোনায় এমন ভালো ছিলাম না বা এমন ভালো কোন বিষয়ে পরতাম না যে পড়াশোনা শেষ করলেই চাকরি জুটে যাবে। সরকারি চাকরি হয়তো পাওয়া যেতো, কিন্তু ঘুষটা কে দেবে? যাই হোক, যদি কোন ছাত্রের আমার মতো বা এরকম কোন সমস্যা থাকে তাহলে তাদের ফ্রিল্যান্সিং করাটার মধ্যে আমি দোষের কিছু দেখি না।

আর এও ভাবতে পারো যে পড়াশোনা আর ফ্রিল্যান্স পাশাপাশি করবো।

ভুলে যাও ভাই, এটা সম্ভব না। আমার এই কথা শুনে অনেকেই খেপে উঠতে পারেন যে, আপনি পারেন নি জন্যে কি সবাই পারবে না? আমি তাদের প্রশ্ন করবো, একজন মেডিক্যালের স্টুডেন্ট বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট দিনে কয় ঘন্টা সময় পায় অবসর কাটানোর জন্য? বাংলাদেশের তাইম জোন অনুসারে ফ্রিল্যান্সিং কে রাতের পেশাই বলা চলে। হাতে গোনা গুটিকয়েকজন ফ্রিল্যান্সাররাই দিনের বেলা কাজ করতে পারেন। আর ছাত্রদের জন্য তো দিনের বেলা কাজ করা সম্ভবই না। তাহলে রাতে কাজ করলো, ঠিক আছে। রাতের পড়াশোনার কথা যদি বাদও দেই ঘুমটাকে তো আর বাদ দেয়া যাবে না।

এখন প্রশ্ন করেন, আমরাতো রাতে ঘুমাই না আমরা কি মরে গেছি?

হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা রাতে না ঘুমিয়ে বেঁচে থাকি। কিন্তু দুপুর দুইটা পর্যন্ত যে পড়নের লুঙ্গি গলায় তুলে ঘুমিয়ে থাকেন, সেই সুযোগটা ছাত্রদের দিতে পারবেন? তাদের স্কুল/কলেজ/ভার্সিটির ক্লাস গুলি কি আপনিই করে দিবেন? বলতে পারেন যে, সকালে না ঘুমিয়ে বিকেলে ঘুমাবে। বাহ, দারুন সমাধান। সকালে স্কুল, বিকালে ঘুম, আর রাতে কাজ। কি সুন্দর রুটিন। বাড়িতে পড়াশোনা না করে খালি স্কুল করেই একেকজন আইনাস্টাইন হয়ে যাবে।

আরেকটা যুক্তি দেখাতে পারেন যে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।

হুম ভালো বলেছেন, কিন্তু কি জানেন সব সময় প্রবাদ-প্রবচন কাজে আসে না। আপনার হাজার ইচ্ছে থাকলেও একদিনকে আপনি ২৪ ঘন্টার বেশী সময় বসিয়ে রাখতে পারবেন না। আর সময় বাড়ানো না গেলে কি হবে তা উপরের পয়েন্টেই বলেছি।

এতো যুক্তি তর্ক দিয়ে লাভ নেই। একজন একসাথে দুইটা চলন্ত নৌকায় পা রাখতে পারে না। যারা পারে তারা অনেক ব্রিলিয়ান্ট। তাই দুই নৌকায় পা রাখার আগে ভেবে দেখুন আপনি টাল সামলাতে পারবেন কিনা।

আর একটা কথা, খালি ফ্রিল্যান্সার দিয়ে কিন্তু দেশ চলে না। দেশে সব ধরনের পেশাজিবিই থাকা দরকার, তাছাড়া দেশ মুখ থুবরে পরবে।

এই টপিকের আরও কিছু পোস্টঃ

© সোলায়মান হায়দার